মানুষ, মানুষের জন্য, জীবনের জন্য, মানবতার এই বাণী মনীষীগণ ধারণ, লালন ও প্রচার করে থাকেন মানুষের মধ্যে কল্যাণকে অনন্তকাল পর্যন্ত জাগ্রত রাখার জন্য। সেই মানব সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৭৫ সালের ১২ নভেম্বর, রংপুর শহরের কিছু বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫-এ২ বাংলাদেশ এর অধীনে লায়ন্স ক্লাব অব রংপুর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবের বরেণ্য মানবদরদী লায়নবৃন্দ মানব সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৮৩ সালে ১২ ফেব্রয়ারী ৪০ জন শিক্ষার্থী, ৪জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শাপলা চত্বরের নিকটস্থ আদর্শ বিদ্যালয়ের কয়েকটি শ্রেণি কক্ষ ভাড়া নিয়ে “লায়ন্স কিন্ডার গার্টেন স্কুর, রংপুর” এর শুভ যাত্রা শুরু করে।
একটি আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর শুভ উদ্বোধন করেন লায়ন্স ক্লাব জেলা ৩১৫-এ২ বাংলাদেশ এর সম্মানিত গভর্ণর লায়ন ডাঃ জি মঈদ। যাঁদের মহৎ উদ্যোগে “লায়ন্স কিন্ডার গার্টেন স্কুলটি” প্রতিষ্ঠিত হয় তারা হলেন, লায়ন ডাঃ আব্দুস সাত্তার, সভাপতি, পরিচালনা পরিষদ (তৎকালনি), লায়ন মেজর এ এস এম সামসুল আরেফিন, লায়ন ডাঃ দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক, লাযন এস এম সালেক, লায়ন এস এম খালেক, লায়ন মনিরুজ্জামান, লায়ন অধ্যাপক ডাঃ এম নুরুজ্জামান, লায়ন ভবতোষ দত্ত, লায়ন আবু হায়দার মোঃ আখতার, লায়নেস সামসুন্নাহার, লায়নেস নিলুফা খারেক, লায়নেস ফজিলাতুন নাহার চৌধুরী, লায়ন জুলফিকার হায়দার সহ আরো অনেকে। যাঁদের নিরলস প্রচেষ্টার ফল আজকের এই “লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর। সেই থেকে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর, লায়ন্স ক্লাব অব রংপুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। এটি এই ক্লাবের একটি স্থায়ী মানব সেবা প্রকল্প। তাঁরা আমাদের নিকট চির অম্লান হয়ে থাকবেন। অধ্যক্ষ মিস রাহেলা খাতুন, বি,এ,বি,টি স্কুল প্রশাসন সহ ৪ (চার) জন প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হলেন মিসেস বুলা ভৌমিক (যিনি বর্তমান ২০১৯ খ্রিঃ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পারন করেছেন), মধুছন্দা ভট্টাচার্য, নাজমুন নাহার দীনা, আশতাক মহল খান গ্রেস। ১৯৮৪ সালে ভাড়া করা আদর্শ স্কুল থেকে লায়ন্স ক্লাব অব রংপুর এর নিজস্ব স্থাপনার কয়েকটি কক্ষে ও ফাঁকা জায়গায় তৈরি কয়েকটি টিনসেড শ্রেণি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটিকে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৪ সালে ৩য় শ্রেণি, ১৯৮৫ সালে ৪র্থ শ্রেণি ১৯৮৬ সালে ৫ম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে প্রথম প্রাথমিক/প্রাইমারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সকলে বৃত্তি প্রাপ্ত হয়, এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে রংপুর শিক্ষা সমাজে এক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয। ১৯৯১ সালে নিম্ম মাধ্যমিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে “লায়ন্স কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাইস্কুল” নামকরণ করা হয়। ১৯৯২ সালে ১ জানুয়ারী রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার অনুমতি লাভ করে। ১৯৯৪ সালে ১ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমিক শাখা এমপিও ভুক্ত হয় এবং ঐ সালেই শিক্ষার্থীরা প্রথম ঝ. ঝ. ঈ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সাফল্য লাভ করে। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০০ খ্রিঃ মার্চ-এপ্রিল মাসে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০১ সারে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠদান অনুমতি লাভ করার পর ১৪ জন শিক্ষার্থী (এর মধ্যে ঝ. ঝ. ঈ/২০০১ এ ১/২ বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থী সহ) ভর্তি করা হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ ফজলুর রহমান সহ ১৮ জন শিক্ষক নিয়ে কলেজ শাখার পাঠদান শুরু হয়। কলেজ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকবৃন্দ হলেন- মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ আল হেলাল, সঞ্জিত কুমার সরকার (দুরন্ত), ফারজানা ইয়াসমিন, মোঃ ইনামুল হাসান, হোসনে আরা মাহমুদা, মোঃ উকিল উদ্দিন, মোঃ শোয়েব মিয়া, মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ, মোঃ মেছের উদ্দিন, মোঃ শাহজান মিয়া (রাজা মিয়া), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ মোজাফ্ফর হাসান, মাসুমা নাসরিন, সানজিদা খানব প্রভাষক হিসেবে ও তাহিরা আখতার বানু, মোঃ নুরুন্নবী, মোঃ আখতারুজ্জামান প্রদর্শন হিসেবে পাঠদান করেন।
প্রতিষ্ঠানটি স্কুল থেকে কলেজে পরিণত হওয়ার পর ১৩/০৪/২০০৩ খ্রি. তারিখে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে এর নাম “লায়ন্স কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাইস্কুল” থেকে পরিবর্তন করে “লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর” নামকরণ করা হয়। ২০০৬ সালে ১ জুলাই তারিখে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর (কলেজ শাখা) স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৯ সালে ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার ২৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও ঘোষণা করলে সেখানে লায়ন্স স্কুল এন্ড করেজ রংপুর এর কলেজ স্তরটি এমপিও ভুক্ত হয়। বর্তমানে (২০১৯ খ্রিঃ) প্রতিষ্ঠানটির স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২২০০ জন এবং কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১৫০ জন, মোট ৩,৩৫০ জন শিক্ষার্থী প্রায়। শিক্ষকবৃন্দের সংখ্যা, স্কুলে-৪৫ জন, কলেজে-২৭জন, অপিস স্টাফ-৭জন, সাপোর্ট স্টাফ-৩০জন সর্বমোট ১০৯ জন। প্রতিষ্ঠানটি লায়ন ডাঃ আব্দুস সাত্তার ভবন ৬তলা, লায়ন ডাঃ দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক ভবন ৩তলা, লায়ন শাহ্ সালেক ভবন ৪তলা ও ১টি বর্ধিত টিনসেড ভবন সহ মোট ৪টি ভবন আছে। প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমাণ প্রায় এক একর। প্রতিষ্ঠানটি আগামী পথ চলায় নিঃস্বার্থ ভাবে সকলের সহযোগিত কামনা করে।